ট‍্যাব পাওয়া অনিশ্চিত প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতায় : ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ পড়ুয়ারা

5th January 2021 9:12 pm বর্ধমান
ট‍্যাব পাওয়া অনিশ্চিত প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতায় : ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ পড়ুয়ারা


প্রদীপ চট্টোপাধ‍্যায় ( জামালপুর ) :  করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । তার কারণে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের পঠন পাঠন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য তাদের প্রত্যেককে একটি করে ‘ট্যাব’ দেবার কথা ঘোষনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঘোষনা করলেও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে এই বিষয় সংক্রান্ত সমস্ত দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের  জামালপুরের পাঁচড়া সাগর চন্দ্র রক্ষিত স্মৃতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশালাচরণ রায় । তার কারণে এই বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া ৪৮ জন ছাত্র-ছাত্রীর ‘ট্যাব’ পাওয়া  কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । ‘ট্যাব’ পাবার জন্য সহায়তা করা ও  প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে মঙ্গলবার জামালপুর ব্লকের বিডিওর দ্বারস্থ হয় ছাত্র- ছাত্রীরা ।এই বিষয়ে তারা বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছে।এত কিছুর পরে এদিনও বিদ্যালয়ে না এসে ফোন সুইচ অফ করেরেখে প্রধান শিক্ষক দায় এড়িয়েই থাকেন।প্রধান শিক্ষকের এমন কীর্তিকলাপে বেজায় চটে গায়েছেন প্রশাসনের কর্তারা ।  পাঁচড়া সাগর চন্দ্র রক্ষিত স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের  দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা এদিন লিখিত অভিযোগ পত্র নিয়ে বিডিও-র কাছে হাজির হন ।তারা বিডিও শুভঙ্কর মজুমদারকে জানিয়েছেন , করোনা অতিমারির কারণে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র- ছাত্রীদের পড়াশুনায় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সমস্ত স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র- ছাত্রীদের ‘ট্যাব’ দেবার কথা ঘোষনা করেছেন । ‘ট্যাব ’ কেনার অনুদানের টাকা দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র- ছাত্রীদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকার কথা ।এই সংক্রান্ত বিষয়ে স্কুলের  যা যা ব্যবস্থা গ্রহন করার দরকার ছিল তার কোন কিছুই করেন নি প্রধান শিক্ষক বিশালা চরণ রায় । সাগর চন্দ্র রক্ষিত স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের ছাত্র রাহুল পরামানিক ও ছাত্রী বিপাশা ঘোষ বলেন ,তারা যাতে ‘ট্যাব’ পেতে পারেন সেই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কোন ব্যবস্থাই এখনও পর্যন্ত নেন নি । তিনি বিদ্যালয়ের ছাত্র- ছাত্রীদের সঙ্গে কোনরুপ যোগাযোগও করছেন না।  ছাত্র- ছাত্রীরা ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে । ছাত্র- ছাত্রীদের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক বিশালা চরণ রায় স্কুলেও দীর্ঘদিন ধরে আসছেন না । নিজের মোবাইল ফোনও তিনি সুইচ অফ করে রেখে দিয়েছেন । স্কুলের তরফে যা কিছু করার ছিল তাও করেন নি ।  গত ৪ জানুয়ারি অর্থাৎ সোমবার প্রধান শিক্ষকের বিদ্যালয়ে আসার কথা থাকলেও তিনি আসেন নি ।ছাত্র- ছাত্রীরা আরো জানিয়েছে,প্রধান শিক্ষক এই ভাবে দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ায় তাদের ‘ট্যাব’ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । এই বিষয়ে বিডিও সাহেবই এখন তাঁদের শেষ ভরসা বলে ছাত্র- ছাত্রীরা জানিয়েছেন। দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র- ছাত্রীদের প্রধান শিক্ষক বিশালা চরণ রায় কি ব্যক্ষা দেন তা জানার জন্য এদিন তাঁর ফোন নম্বরে (৮০০১৫০৯৮০৪)একাধীক বার ফোন করা হয় । কিন্তু তাঁর ফোন সইচ অফ থাকায় কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি ।  প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ,কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সমস্ত সরকারী ও সরকার পোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র- ছাত্রীদের ‘ট্যাব’ দেবার কথা নবান্ন থেকে ঘোষনা করেন । সেই অনুযায়ী রাজ্যের ১৪ হাজার উচ্চ মাধ্যমিক ও ৬৩৬ টি মাদ্রাসা মিলিয়ে ৯,৫ লক্ষ দ্বাদশ শ্রেণীর  ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ‘ট্যাবের’  ব্যবস্থা করেছে সরকার।শুধুমাত্র প্রাধান শিক্ষকের দায়িত্বজ্ঞান হীনতায় পাঁচড়ার সাগর চন্দ্র রক্ষিত স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের ছাত্র-ছাত্রীদের ‘ট্যাব’ পাওয়া এখন কার্যতই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । অভিযোগ ,শুধু এই ঘটনাই নয় কন্যাশ্রী k2 আপগ্রেডেশন কাজেও প্রধান শিক্ষক একই রকম ভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছেন । ব্লক অফিস থেকে এই বিষয়ে একাধীকবার চিঠি করা হলেও পাঁচড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন গুরুত্ব দেন নি বলে অভিযোগ। তার কারণে বিদ্যালয়ের  ৫১ জন ছাত্রী ২৫ হাজার টাকা কন্যাশ্রী অনুদান পাওয়া থেকেও বঞ্চিত রয়ে গিয়েছেন । এইসব ঘটনা নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও ।তাঁরা বলেন, বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলের অর্থ আত্মসাৎতের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বিশালাচরণ রায় জেলও খেটেছেন ।তার পরেও অযোগ্য প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে না দেবার মাশুল এখন ছাত্র ছাত্রীদের গুনতে হচ্ছে  ।  জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার এবিষয়ে বলেন ,“পাঁচড়া সাগর চন্দ্র রক্ষিত স্মৃতি বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রতি সময়ে আমাদের অভিযোগ শুনে আসতে হচ্ছে । এদিন ছাত্র- ছাত্রীরা যে অভিযোগ করেছে সেই বিষয়টি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডিআই)  ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে । এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা  নেওয়া হচ্ছে ”।  জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান জানিয়েছেন ,“ছাত্র- ছাত্রীদের স্বার্থের বিষয়ে অবহেলা মেনে নেওয়া যায়না । পাঁচড়া স্কুলের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র- ছাত্রীরা যাতে ‘ট্যাব ’ পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয় সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে । ”





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।